
একটা সুন্দর সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে আমরা উপহার দিতে পারি সে ব্যাপারে আপনাদের সহযোগিতা চাই- সিইসি
সংসদে নারীদের জন্য আলাদা ৩০০ আসনের প্রস্তাব
- আপলোড সময় : ০৮-১০-২০২৫ ০৪:২৯:২০ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৮-১০-২০২৫ ০৪:২৯:২০ অপরাহ্ন


আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারী প্রতিনিধিত্বের অংশগ্রহণ চান নারী নেত্রীরা। এক্ষেত্রে সংসদের আসন সংখ্যা ৩০০ থেকে বাড়িয়ে ৬০০-তে উন্নীত করার পাশাপাশি ৩০০ আসনে সরাসরি শুধুমাত্র নারীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। একইসঙ্গে ভোটে নারীদের নিরাপত্তার বিষয়টিও নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছেন তারা। গতকাল মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে (ইসি) নারী নেত্রীদের সঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) নির্বাচনি সংলাপে এসব পরামর্শ দেন নারী নেত্রীরা। সংলাপে সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন ছাড়াও চার কমিশনার উপস্থিত ছিলেন।
সংলাপে ‘নিজেরা করি’র সমন্বয়কারী খুশি কবির বলেন, আপনারা অবাধ সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দিতে চাচ্ছেন। এক্ষেত্রে নির্বাচনে আমরা যেটাতে বেশি আগ্রহী সেটা হচ্ছে নারী প্রতিনিধিত্ব অংশগ্রহণ। সেখানে রাজনৈতিক দল থেকে যে ধরনের উৎসাহ চাচ্ছিলাম সেটা পাচ্ছি না। যে পদ্ধতিতে নির্বাচন হোক সেখানে নারীদের জন্য সরাসরি নির্বাচন চাচ্ছি এবং সংরক্ষিত আসনও চাচ্ছি। যাতে নারীরা সরাসরি নির্বাচনে যাতে আসতে পারে। যাতে ভোটের মাধ্যমে তারা নির্বাচিত হয়ে সংসদে ভূমিকা রাখতে পারে। এছাড়া নারী ভোটারের নিরাপত্তাও আপনাদের নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বলেন, শুধুমাত্র সিইসি জেন্ডার ফ্রেন্ডলি নির্বাচন আশা প্রকাশ করলে তা হবে না। নির্বাচন জেন্ডার ফ্রেন্ডলি করতে হলে যে স্টেকহোল্ডার আছেন তাদের মানসিকতাকে জেন্ডার ফ্রেন্ডলি করতে হবে। আমরা পুরো করতে পারব না হয়তো কিন্তু বেশি যারা নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত আছে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, ‘জেন্ডার ফ্রেন্ডলি নির্বাচন করার ক্ষেত্রে প্রথমে আমার যে কথা মনে আসে তা হলো - আমরা যখন ভোট দিতে যাই, তখন আমরা প্রার্থী দেখি। এই প্রার্থী বাছাইয়ের আপনাদের নজর রাখতে হবে। যারা নারী বিদ্বেষী, যারা সাম্প্রদায়িক, যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে; প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এ তিনটা পয়েন্ট নজর রাখতে হবে আপনাদের। নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভিন হক বলেন, দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও সংসদে আসন বৃদ্ধি হয়নি। আমরা বলেছি ৩০০ আসনের পরিবর্তে ৬০০ আসন করতে হবে। একটি নির্বাচনের আসনে দুটি আসন থাকবে। যেখানে একটিতে শুধু নারী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। আরেকটিতে নারী পুরুষ যে কেউ করতে পারবে। পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতির প্রতি সমর্থন রয়েছে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা মুক্ত নির্বাচন যাতে হয় সেটা আমরা চাই। নারী প্রার্থীরা নানা ধরনের সহিংসতার শিকার হয়। নারী বিদ্বেষী প্রচার-প্রচারণা করা হয়। এবারও আমরা এমন শঙ্কা করছি এবং নারী যারা ভোটার তারা অনেক ধরনের হুমকির মুখে থাকেন। এ জায়গাগুলো কীভাবে বন্ধ করা সে ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের কাছে আমাদের বড় ধরনের প্রত্যাশা থাকবে। উইমেন উইথ ডিজএ্যাবিলিটিজ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক আশরাফুন নাহার মিষ্টি বলেন, প্রতিবন্ধী মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগের সময়ে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। নারী প্রতিনিধিত্ব ও রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মোহাম্মদ সানাউল্লাহ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো যদি ২০৩০ সালের পর ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে না পারে, তাহলে তাদের আর সময়সীমা বাড়ানো হবে না। তার মতে, নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে না পারলে দলের পুনরায় নিবন্ধনের বিষয়টি নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনায় পাশ করালে রাজনৈতিক দলগুলো এ ব্যাপারে আরও সচেতন হবে।
প্রবাসীদের ভোটাধিকার ও পর্যবেক্ষক সংস্থার ভূমিকার বিষয়ে তিনি বলেন, প্রবাসী ভোটের সংখ্যা খুব বেশি না হলেও প্রক্রিয়াটি শুরু হবে, সেটিই জরুরি। এটি দেশের বাইরের নাগরিকদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্তির প্রথম ধাপ।’ পর্যবেক্ষক সংস্থা নিয়েও মন্তব্য করে এই নির্বাচন কমিশনার জানান, অনেক পর্যবেক্ষক সংস্থা যোগ্য হলেও তারা আগের নির্বাচনগুলোতে কাঙ্ক্ষিত ভূমিকা রাখেনি, তাই তাদের এবার পর্যবেক্ষক হিসেবে রাখা যায়নি। গুজব ও অপতথ্য (ডিসইনফরমেশন, মিসইনফরমেশন) মোকাবিলার কৌশল নিয়ে ইসি সানাউল্লাহ বলেন, ‘গুজবের ক্ষেত্রে অর্ধেকের মতো সোর্স ট্রেস করা যায় না। অনেক সোর্স দেশের বাইরে, তাদের আইনের আওতায় আনা যায় না। তবে তথ্যের প্রবাহে লাগাম টানবে না ইসি; বরং, সঠিক ইনফরমেশন দিয়ে ডিসইনফরমেশন, মিসইনফরমেশনকে মোকাবিলা করা হবে।’
সমাপনী বক্তব্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, ফিজিক্যালি ডিজেবল যারা, তাদের ট্রান্সপোর্টটা যাতে কমফোর্টলি আসা-যাওয়া করতে পারে, এগুলা আমাদের পক্ষ থেকে করা সম্ভব। মানে গ্রাউন্ড ফ্লোরে যাতে ভোটকেন্দ্র হয়। নির্বাচন কমিশন এসব ব্যবস্থা করবে। সিইসি বলেন, একটা সুন্দর সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে আমরা উপহার দিতে পারি সে ব্যাপারে আপনাদের সহযোগিতা চাই। আমাদের ইন্টেনশনটা গুড। ইলেকশন কমিশন রিয়েলি ইন্টারেস্টেড টু ডেলিভারি ইলেকশন। এই মেসেজটা আপনারা দিয়ে দিবেন এবং নারী ভোটাররা যাতে আসে ভোট সেন্টারে আসে। ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজের সঞ্চালনায় নির্বাচনি সংলাপে চার নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বেশ কয়েকজন নারী নেত্রী বক্তব্য রাখেন।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ